মুজদালিফা: হজ্জের আধ্যাত্মিক গুরুত্ব ও প্রথা
মুজদালিফা ইসলামের এক পবিত্র স্থান, যা হজের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হিসেবে পরিচিত। মুজদালিফা মক্কা এবং মিনার মধ্যে অবস্থিত একটি উন্মুক্ত ময়দান, যেখানে হজযাত্রীরা আরাফাতের ময়দানে দিন অতিবাহিত করার পর সূর্যাস্তের সময় এসে অবস্থান করেন। এখানে ইশা ও মাগরিবের নামাজ একত্রে আদায় করা হয়, যা হজের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় প্রথা।
অবস্থান:
আরাফাতের ময়দান ছেড়ে প্রায় ছয় কিলোমিটার অতিক্রম করার পর মুজদালিফা। তারপর ওয়াদিয়ে মুহাসসার এর পরে মিনা। মিনা ও আরাফাতের পথে মিনার দক্ষিণ পূর্বে মুজদালিফার অবস্থান।
ঐতিহাসিক বিবরণ:
যিলহজের ৯ তারিখ সূর্য ডুবে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর হাজী সাহেব ধীরে-সুস্থে শান্তভাবে আরাফা থেকে মুযদালিফার দিকে রওয়ানা করবেন। হাজীদেরকে কষ্ট দেয়া থেকে দূরে থাকবেন। চেঁচামেচি ও খুব দ্রুত হাঁটাচলা পরিহার করবেন। ইবন আব্বাস রা. বলেন, ‘তিনি আরাফার দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে আরাফা থেকে মুযদালিফা গিয়েছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেছনে উট হাঁকানোর ধমক ও চেঁচামেচির আওয়াজ শুনতে পেলেন। তখন তিনি তাঁর বেত দিয়ে লোকদেরকে ইশারা করে বললেন,
‘হে লোকসকল! তোমাদের শান্তভাবে চলা উচিত। কেননা দ্রুত চলাতে কোনো কল্যাণ নেই।’[বুখারী : ১৬৭১]
মুযদালিফায় পৌঁছার পর ‘ইশার সময়ে বিলম্ব না করে মাগরিব ও ইশা এক সাথে আদায় করবেন। মাগরিব ও ইশা উভয়টা এক আযান ও দুই ইকামাতে আদায় করতে হবে। জাবের রা. বলেন,
‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযদালিফায় এলেন, সেখানে তিনি মাগরিব ও ইশা এক আযান ও দুই ইকামতসহ আদায় করলেন। এ দুই সালাতের মাঝখানে কোনো তাসবীহ (সুন্নত বা নফল সালাত) পড়লেন না। অতঃপর তিনি শুয়ে পড়লেন। ফজর (সুবহে সাদেক) উদিত হওয়া পর্যন্ত তিনি শুয়ে থাকলেন।’ [মুসলিম ১২১৮]
আকাশ ফর্সা হবার পর সূর্যোদয়ের আগেই মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করা। জাবের রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে উল্লিখিত হয়েছে,
‘আকাশ ভালভাবে ফরসা হওয়া পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উকূফ (অবস্থান) করেছেন। অতঃপর সূর্যোদয়ের পূর্বে তিনি (মুযদালিফা থেকে মিনার দিকে) যাত্রা আরম্ভ করেছেন।[মুসলিম: ১২১৮]
মুজদালিফা ভ্রমণের নির্দেশিকা:
মুজদালিফায় অবস্থান হজের অত্যন্ত শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমী একটি অংশ। আরাফাত থেকে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে এখানে আসার জন্য শারীরিকভাবে ফিট থাকা জরুরি। দীর্ঘ সময় হাঁটার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকাও গুরুত্বপূর্ণ।