মসজিদ আল হারাম: ইতিহাস, গুরুত্ব এবং পুনর্নির্মাণ
মসজিদ আল হারামের অবস্থান:
মসজিদ আল হারাম পবিত্র কাবাকে কেন্দ্র করে অবস্থিত এবং এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম মসজিদ। মসজিদটি মুসলিমদের জন্য একটি আধ্যাত্মিক কেন্দ্র যেখানে শুধুমাত্র হজ্জের সময়ই নয়, বর্ষব্যাপী উমরাহ পালন করা যায়।
বিশ্বের বৃহত্তম মসজিদ হওয়ার পাশাপাশি, মসজিদ আল হারাম ইতিহাসে নির্মিত সবচেয়ে ব্যয়বহুল ভবনগুলির একটি। বহু বছর ধরে এর আকার ও কাঠামোতে অনেক পরিবর্তন ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে অনেক খলিফা, সুলতান এবং রাজা এটি নিয়ন্ত্রণ করেছেন। বর্তমানে এটি সৌদি আরবের রাজা, দুই পবিত্র মসজিদের অভিভাবকের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে।
কাবার ঐতিহাসিক পটভূমি:
কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ কাবার সূচনা সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন। কুরআনের মতে, কাবা ছিল প্রথম পবিত্র স্থান যেখানে মানুষ আল্লাহর ইবাদত করতে পারে। আল্লাহ বলেন:
“এবং [যখন] ইবরাহীম ঘরের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন ইসমাইলের সাথে, [বলেছিলেন], ‘আমাদের রব, আমাদের থেকে এটি গ্রহণ করো।’ নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’” (সূরা আল-বাকারা, ১২৭)
ইব্রাহিম (আ.) কাবা নির্মাণ শেষ করার পর, একটি ফেরেশতা তাকে একটি পাথর দেন যা আবু কুবাইস পর্বত থেকে এসেছিল। এই পাথর, কালো পাথর হিসেবে পরিচিত, ইসলামি ইতিহাসবিদদের মতে, ইব্রাহিমের মূল নকশার একমাত্র অপরিবর্তিত অংশ।
নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর যুগের কাবা:
ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও আক্রমণের কারণে কাবার উপর বিভিন্ন ক্ষতি হয়েছে এবং কখনও কখনও সম্পূর্ণ পুনর্নির্মাণের প্রয়োজন হয়েছে। ৬০৫ খ্রিস্টাব্দে, নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মের পূর্বে কাবার পুনর্নির্মাণ করা হয়েছিল, যা প্রমাণ করে যে কাবার গুরুত্ব প্রাচীনকাল থেকেই ছিল।
উমাইয়া শাসনামলে কাবার পরিবেশনা এবং মসজিদের আকারে পরিবর্তন আনা হয়। খলিফা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ানের শাসনকালে ৬৯২ সালে প্রথম বড় সম্প্রসারণ এবং অলংকরণ সম্পন্ন হয়। মসজিদটি পরবর্তীতে মার্বেলের ব্যবহার এবং মসজিদের পরিধি বৃদ্ধির মাধ্যমে আরও বৃহত্তর আকার ধারণ করে।
সৌদি আরবের শাসনামলের পুনর্নির্মাণ:
১৯৫৫ থেকে ১৯৭৩ সালের মধ্যে, সৌদি রাজাদের নেতৃত্বে মসজিদ আল হারামের ব্যাপক পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এর মধ্যে উচ্চতা বৃদ্ধি, নতুন মিনার নির্মাণ এবং মসজিদের ভেতরে মার্বেলের মেঝে স্থাপন করা হয়। ১৯৮০-এর দশকে কিং ফাহদের নেতৃত্বে মসজিদের আরও সম্প্রসারণ করা হয়, যেখানে নতুন প্রার্থনা কক্ষ এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংযোজন করা হয়।
বর্তমান উন্নয়ন:
২০০৮ সালে কিং আবদুল্লাহ মসজিদ আল হারামের জন্য একটি বিশাল নির্মাণ প্রকল্প শুরু করেন। এর ফলে মসজিদটির ধারণক্ষমতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। ২০১৫ সালে কিং সালমানের অধীনে এই প্রকল্পের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে। মক্কার বিখ্যাত আবরাজ আল বাইত কমপ্লেক্স এবং মক্কা রয়্যাল ক্লক টাওয়ার মসজিদের আঙ্গিনায় নির্মিত হয়, যা বিশ্বের অন্যতম উচ্চ ভবন হিসেবে পরিচিত।
মসজিদুল হারামের মিনার:
মসজিদুল হারামে প্রথম মিনার নির্মিত হয় উমাইয়া শাসনামলে। খলিফা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ানের আমলে ৬৯২ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটির প্রথম বড় আকারের সম্প্রসারণ এবং অলংকরণ করা হয়। এই সময়েই প্রথম মিনার সংযোজন করা হয়েছিল। তবে, মসজিদটির প্রকৃত আকার ও মিনারের সংখ্যা পরবর্তীতে বিভিন্ন খলিফা, সুলতান এবং সৌদি রাজাদের আমলে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়।
বর্তমান মিনারগুলোর বৈশিষ্ট্য
বর্তমানে মসজিদুল হারামে ১১টি মিনার রয়েছে। এগুলি প্রতিটির উচ্চতা প্রায় ৮৯ মিটার। প্রতিটি মিনার মসজিদের চারপাশে স্থাপিত এবং এগুলি মসজিদের বিভিন্ন প্রবেশপথ নির্দেশ করে। মিনারগুলো ইসলামী স্থাপত্যের মার্বেল এবং সাদা পাথরের নিপুণ কারুকাজে সজ্জিত। মসজিদটির সাম্প্রতিক প্রসারণের পর, মিনারের সংখ্যা এবং উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা মসজিদটিকে আরও জাঁকজমকপূর্ণ করে তুলেছে।
মসজিদ আল হারাম বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক স্থাপনা হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে এবং প্রতিনিয়ত এটির পুনর্নির্মাণ ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বের আধ্যাত্মিক কেন্দ্র হিসেবে তা আরও সুসংহত হচ্ছে।