জাবাল আল-নূর: প্রথম ওহির পবিত্র স্থান
মক্কার প্রান্তে অবস্থিত এক মহিমান্বিত পাহাড় হলো জাবাল আল-নূর, যা ইসলামের ইতিহাসে গভীর গুরুত্ব বহন করে। এর নামের অর্থ “আলোর পর্বত,”। এটি ইসলামের ইতিহাসে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, কারণ এখানে নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) হিরা গুহায় প্রথম ওহী লাভ করেছিলেন।
অবস্থান:
জাবাল আল-নূর মক্কার মসজিদুল হারাম থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। পর্বতটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬৪২ মিটার উপরে উঠে দাঁড়িয়েছে এবং এর পথ অত্যন্ত খাড়া ও পাথুরে। যদিও এটির খাড়া পথ চলাচল করা কষ্টকর, তবুও এই পথ অনুসরণ করে উপরে ওঠা যায় হিরা গুহায়, যা এই পবিত্র স্থানটির কেন্দ্রীয় আকর্ষণ।
ঐতিহাসিক বিবরণ:
জাবাল আল-নূরের চূড়ায় রয়েছে হিরা গুহা, একটি ছোট এবং সাধারণ গুহা যেখানে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সঃ) প্রার্থনা ও ধ্যান করতেন। যা লম্বায় ৪ মিটার আর পাশে ১.৫ তথা দেড় মিটার। উচ্চতায় ভালোভাবে সোজা হয়ে দাঁড়ানোও কষ্টকর। এই গুহাতেই তিনি পবিত্র কুরআনের প্রথম আয়াত লাভ করেছিলেন, “পড়, তোমার প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন” (সূরা আল-আলাক ৯৬:১)।
এ ওহি লাভের মাধ্যমেই প্রথম শুরু হয়েছিল প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়তি দায়িত্ব পালনের কঠিন জীবনের শুভ সূচনা। কেননা তিনি যখন ওহি নিয়ে হেরা গুহা থেকে পাহাড়ের অর্ধেক নিচে নেমে আসলেন, তখন তাঁর কানে একটি কণ্ঠের আওয়াজ আসে-
‘হে মুহাম্মাদ! আপনি আল্লাহর নবি আর আমি জিবরিল।’
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হেরা গুহা থেকে নিজ ঘরে ফিরে আসলেন এবং হজরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললেন, আমাকে কম্বল দ্বারা আবৃত করে দাও, জড়িয়ে ধরো।
জাবাল আল-নূর ভ্রমণের নির্দেশিকা:
যারা মক্কায় আসেন, তাদের জন্য জাবাল আল-নূর একটি জনপ্রিয় গন্তব্য, বিশেষত হজ এবং উমরাহ তীর্থযাত্রীদের জন্য। পবিত্র কাবা শরিফ থেকে ২ মাইল দূরে অবস্থিত। মক্কা থেকে টেক্সি বা প্রাইভেট কার করে জাবাল আল-নূর আসা যায়। অনেক এজেন্সি এবং হজ্জ ও উমরাহ প্যাকেজ এর সাথে এই ভ্রমন বিনামূল্যে দিয়ে থাকে।
দর্শনার্থীদের পর্বত চড়ার জন্য মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত হতে হবে, কারণ এটি চড়তে শক্তিশালী ও সামর্থবান মানুষদের প্রায় ১ ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায়। প্রায় ১০০০ ফুট উচ্চতার ভয়ংকর পথ পাড়ি দিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় ওঠতে বেশ কয়েকবার বিশ্রাম নিতে হয়। গরম থেকে বাঁচতে সকাল বা বিকালে চড়া ভালো।
সমতল ভূমি থেকে পাহাড়ের ওপরের দিকে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ ফুট পথ গাড়িতে যাওয়া যায়। সেখান থেকে ৮৯০ ফুট উচ্চতায় হেরা গুহা অবস্থিত। হেরা গুহায় যেতে আরও প্রায় ১০০ ফুট রাস্তা পাড়ি দিতে হয়।
হেরা গুহাটি পাহাড়ের সর্বোচ্চ চুড়ায় না হলেও সেখানে যেতে হলে পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় ওঠতে হয়। সেখানে ওঠা ছাড়া হেরা গুহায় যাওয়ার কোনো বিকল্প পথ নেই।